তুরস্কের ঐতিহাসিক নিদর্শন হায়া সোফিয়াকে সম্প্রতি মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করেছে দেশটির একটি আদালত। জুলাই মাসের ২৪ তারিখ থেকে হায়া সোফিয়াতে নামাজ আদায় করতে পারবেন মুসল্লিরা। তবে নামাজের সময় মসজিদটির ভেতরে থাকা খ্রিস্টীয় চিহ্ন বিশেষ একটি লেজারের মাধ্যম ঢেকে দেয়া হবে। জানা গেছে, হায়া সোফিয়াকে মসজিদে রাপন্তরিত করলেও এর ভেতরে বহু জায়গায় খ্রিস্টীয় চিহ্ন রয়েছে। জাদুঘর হিসাবে দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠলেও সেই চিহ্নগুলোকে সরানো হয়নি। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আলাদা। এ নিয়ে তুরস্কের এ কে পার্টির মুখপাত্র ওমর সেলিক জানিয়েছেন, এই জাদুঘরে প্রবেশ ছিল অবাধ। কোনও প্রবেশমূল্য নেওয়া হত না। জাদুঘরের ভিতর বহু জায়গায় ঐতিহাসিক চিহ্ন রয়েছে। সেগুলোকে আপাতত নামাজের সময় ঢেকে রাখা হবে। তবে পরবর্তী সময়ে ওই চিহ্নগুলো একেবারে মুছে ফেলা হবে কি না তা নিয়ে তিনি কিছুই বলেননি। তুরস্কের একটি আদালত জানিয়েছিল, ১৯৩৪ সালে বেআইনিভাবে এই মসজিদকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছিল। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এর পরই ঘোষণা দেন, দুসপ্তাহের মধ্যে মসজিদে রূপান্তরিত করা হবে হায়া সোফিয়াকে।


তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত বিখ্যাত জাদুঘর হায়া সোফিয়া


 


হায়া সোফিয়া তৎকালীন বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের নির্দেশে ৫৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়


 


৫৩৭ থেকে ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে হায়া সোফিয়া ব্যবহৃত হয়


 


চতুর্থ ক্রুসেডের সময় ক্যাথলিক খ্রিষ্টানেরা অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের রাজধানী কনস্ট্যান্টিনোপল আক্রমণ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং হায়া সোফিয়াকে অর্থোডক্স গির্জা থেকে ক্যাথলিক গির্জায় রূপান্তর করে


 


হায়া সোফিয়া ১২০৪ থেকে ১২৬১ সাল পর্যন্ত ক্যাথলিক গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হয়


 


পরে এটি আবার খ্রিষ্টানদের হাতে চলে আসে। ১২৬১ থেকে ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত হায়া সোফিয়ার পরিচিতি ছিল অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে


 


অটোমান সুলতান মেহমেত ইস্তাম্বুল জয় করার পর ১৪৫৩ সালে এটি মসজিদে রূপান্তর করা হয়


 


হায়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের বিষয়ে দুটি তথ্য পাওয়া যায়। প্রথমত, তৎকালীন যুদ্ধনীতি অনুযায়ী অটোমান সুলতান মেহমেত দখল করে নিয়েছিলেন হায়া সোফিয়া। দ্বিতীয়ত, সুলতান মেহমেত খ্রিষ্টান পাদরিদের কাছে থেকে হায়া সোফিয়া কিনে নিয়েছিলেন।


 


পরে সুলতান মেহমেত আয়া সোফিয়াকে একটি ওয়াকফ সম্পত্তিতে রূপান্তর করেন এবং নিজের নামে ফাউন্ডেশন গঠন করে তার ওপর হায়া সোফিয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন


 


সুলতান মেহমেতের পাদরিদের কাছে থেকে হায়া সোফিয়াকে কেনার বিষয়টি আল-জাজিরার অনুসন্ধানমূলক সংবাদে উঠে এসেছে। তবে প্রথাগত অটোমান ইতিহাসবিদেরা এই বিষয়ে একমত নন।


 


১৯২৩ সালে মুস্তফা কামাল অটোমানদের উৎখাত করলেও গণমানুষের অব্যাহত চাপে হায়া সোফিয়া মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে


 


মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক সরকার ১৯৩৫ সালে হায়া সোফিয়াকে জাদুঘরে রূপান্তর করে


 


প্রতিষ্ঠার পর থেকে হায়া সোফিয়া ৯২১ বছর গির্জা হিসেবে ব্যবহৃত হয়


 


৪৮২ বছর মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে হায়া সোফিয়া


 


সর্বশেষ ৮৫ বছর হায়া সোফিয়ার পরিচয় জাদুঘর হিসেবে


 


তুরস্কের ইসলামপন্থীরা এই জাদুঘরকে মসজিদে রূপান্তরে অনেক দিন ধরে আহ্বান জানিয়ে আসছিল। তবে ধর্মনিরপেক্ষরা এর বিরোধিতা করছিল


 


তুরস্কের সাংবিধানিক আদালত ১০ জুলাই ২০২০ তারিখে হায়া সোফিয়াকে মসজিদ থেকে জাদুঘরে রূপান্তরের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে


 


তুরস্কের সাংবিধানিক আদালতের রায় ঘোষণার দিনই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এটিকে মসজিদে রূপান্তরের ঘোষণা দেন


 


প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ জুলাই থেকে হায়া সোফিয়ায় নামাজ আদায় করা শুরু হবে। তবে দেশি–বিদেশি পর্যটকদের জন্য হায়া সোফিয়ার দরজা খোলা থাকবে।





মূল সংবাদটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন