হামহাম ঝর্না (HumHum Water Falls) জলপ্রপাতঃ

প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় নতুন সন্ধান পাওয়া রোমাঞ্চকর নয়নাভিরাম হামহাম (HumHum Water Falls) জলপ্রপাত। একনজর দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠছে দিনে দিনে। দীর্ঘ পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে অনেক কষ্টে গহীন অরন্যে এই জলপ্রপাতকে দেখতে প্রতিদিন আগমন ঘটছে পর্যটকদের ঢল।





haham-water-falls-view-হামহাম-ঝর্না




কমলগঞ্জ রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের কুরমা বনবিটের গহিন অরণ্যঘেরা দুর্গম পাহাডরী এলাকার এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত। স্থানীয় বাসিন্দারা একে হামহাম ঝর্না (HumHum Water Falls) ঝর্না বা অনেকে হাম্মাম ঝর্না বলে ডাকে । হামহাম ঝর্না (HumHum Water Falls) জলপ্রপাতে যাবার কোনো রাস্তা না থাকলেও পর্যটকরা দুর্গম পাহাড় ও ছোট ছোট আকাবাকা এবং উচু উচু পাহাড় ডিংগিয়ে অনেক কষ্ট করে এখানে ছুটে যান প্রকৃতির নির্মল বিনোদন লাভের আশায়।





দূর্গম হামহাম জলপ্রপাত অ্যাডভেঞ্চারঃ












হামহাম-ঝর্নার্-অ্যাডভেঞ্চার




পথের দু পাশের বুনো গাছের সজ্জা যে কোনো পর্যটকের দৃষ্টি ফেরাতে সক্ষম। জারুল, চিকরাশি ও কদম গাছের ফাঁকে ফাঁকে রঙিন ডানা মেলে দেয় হাজারো প্রজাপতি ।
চশমা বানরের আনাগোনা ডুমুর গাছের শাখায় ৷ চারদিকে গাছগাছালি ও প্রাকৃতিক বাঁশবনে ভরপুর এ বনাঞ্চল। ডলু, মুলি, মিটিংগা, কালি ইত্যাদি অদ্ভুত নামের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ এ বাগানগুলোকে দিয়েছে ভিন্ন এক রূপ।

পাথুরে পাহাড়ের ঝিরি পথে হেঁটে যেতে যেতে সুমধুর পাখির কলরব মনকে ভাললাগার অনুভূতিতে ভরিয়ে দেবে। দূর থেকে কানে ভেসে আসবে বিপন্ন বন মানুষের ডাক। কিছুদূর এগিয়ে যাওয়ার পর শুরুতে আপনার দু’চোখের সামনে ভেসে উঠবে পাহাড় থেকে ধোঁয়ার মতো ঘন কুয়াশা ভেসে উঠার অপূর্ব দৃশ্য। মনে হবে যেন ওই নয়নাভিরাম পাহাড় আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
এভাবেই হাটতে হাটতে একসময় পৌঁছে যাবেন আপনার কাঙ্খিত হামহাম ঝর্না (HumHum Water Falls) জলপ্রপাতের খুব কাছাকাছি।





কিছু দূর এগুলেই শুনতে পাবেন হামহাম ঝর্না (HumHum Water Falls) জলপ্রপাতের শব্দ। চারিদিকে এক শীতল শান্ত পরিবেশ । ডানে বামে চোখ ফেরানোর উপায় নেই।
কেবলই ইচ্ছে করবে তাকিয়ে থাকি সৃষ্টিকর্তার এই অনন্য সৃষ্টির জন্য। জঙ্গলে উল্লুক, বানর আর হাজার পাখির ডাকাডাকির সাথে ঝর্নার ঝড়ে পড়ার শব্দ মিলে মিশে তৈরি হয়েছে অদ্ভুত এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ। ক্ষনিকের জন্য ভূলেই যেতে হবে কোথায় আছি, কিভাবে আছি। উপরে আকাশ, চারিদিকে বন, পায়ের নিচে ঝিরির স্বচ্ছ জল আর সম্মুখে অপরূপ বর্না।





হামহাম (HumHum Water Falls) জলপ্রপাত আবিসস্কারের ইতিহাস:





পাহাড়ি আদিবাসীরা জানান, পাহাড়ী অধিবাসীরা বলেন, পানি পতনের স্থানে এক সময় পরীরা গোসল করত । গোসল খানাকে আরবীতে হাম্মাম বলে ও জলের স্রোতধ্বনীকে ত্রিপুরার টিপরা ভাষায় হাম্মাম বলে তাই এ জলপ্রপাতটি হাম্মাম নামে পরিচিত। উপরে যে স্থান থেকে জল পড়ে সেখান থেকে ২শত ফুট পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা সীমানা ।





HumHum-Water-Falls




হামহাম (HumHum Water Falls) যাওয়ার জন্য বনের ভেতর দুটি পথ আছে। বনের শুরুতেই হাতের ডানে ও বামে পাশাপাশি পথ দুটির অবস্থান । একটা দিয়ে যেতে হবে আরেকটা দিয়ে আসবেন। ডানের পথ দিয়ে ঢুকে বাম দিয়ে বের হবেন এটাই ভালো, কারন ডানের পথটা দীর্ঘ এবং অনেক গুলো উঁচু টিলা ডিংগাতে হয়, যা ফেরার পথে পরলে খুব কষ্ট হবে, তাই প্রথমে কষ্ট করেন আসার সময় একটু আরাম করে আসবেন, ফেরার পথ কম না তবে সমতল বেশি, টিলা কম ডিংগাতে হয়।





হামহাম (HumHum Water Falls) যাবার জন্য সাথে একজন গাইড নিয়ে যাওয়া অত্যাবশ্যক । কারন প্রথমবার যারা যাবেন তাদের জন্য রাস্তা ভুল করাই স্বাভাবিক। এছাড়া ভ্রমণের সময় পাহাড়ি পথে হাটার সুবিধার্থে এবং আত্মরক্ষার্থে প্রতোকের সাথে একটি করে বাশ নেয়া আবশ্যক । এছাড়া জোকের হাত থেকে রক্ষা পেতে সাথে করে লবণ ও সরিষার তেল নিয়ে নিলে ভালো হয়।





কীভাবে যাবেন:





কমলগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৩৮কিঃমিঃ পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বনবিট এলাকায় হামহাম ঝর্না (HumHum Water Falls) জলপ্রপাতের অবস্থান। এ দর্শনীয় স্থানে যেতে হলে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল শহর থেকে স্থানীয় মিনিবাস, জীপ, মাইক্রোবাস ও সিএনজি নিয়ে কমলগঞ্জের-কুরমা চেকপোষ্ট পর্যন্ত প্রায় ২৫কিঃ পাকা রাস্তা বাকী ১৫/২০ কিঃ মিঃ মাটির রাস্তায় পায়ে হেঁটে চাম্পা রায় চা বাগানের ভেতর দিয়ে কলাবন বস্তি হয়ে মোকামটিলায় গেলে দেখা পাওয়া যায় ১৫০ফুট উচ্চতা ও ৮০ ফুট প্রস্তের এই হাম্মাম জলপ্রপাত।





haham-waterfalls-map




ঢাকা থেকে সরাসরি সড়ক ও রেল পথে মৌলভীবাজার যাওয়া যায়। যারা আকাশ পথে মৌলভীবাজার যেতে চান তাদেরকে প্রথমে সিলেট গিয়ে তারপর সেখান থেকে সড়ক বা রেল পথে মৌলভীবাজার আসতে হবে। অন্যন্য রুটের চেয়ে রেলপথে ভ্রমণই সুবিধাজনক । সড়কপথে ঢাকার সায়েদাবাদ, কমলাপুর, কল্যাণপুর সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দিনে-রাতে বিভিন্ন পরিবহনের অসংখ্য বাস এই রুটে চলাচল করে ।





রেলপথে ঢাকা থেকে সরাসরি মৌলভীবাজারের সাথে রেল যোগাযোগ রয়েছে। ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো
মৌলভীবাজার হয়ে সিলেটে যায়। ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে ।





মূল সংবাদটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন