আজ বিশ্ব হার্ট দিবস। এবছরের প্রতিপাদ্য, ‘হৃদয় দিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ’। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০০টি দেশ দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে থাকে। স্বাস্থ্য ও পরিবার ক্যলাণ মন্ত্রণালয়, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিবছর দিনটি গুরুত্ব সহকারে পালন করে। জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগে মৃত্যুর হার ১৫ লাখ, শ্বসনতন্ত্রের রোগজনিত মৃত্যুর হার ৪০ লাখ, ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার ৮২ লাখ। হৃদরোগজনিত মৃত্যুর হার বছরে সর্বোচ্চ এক কোটি ৭০ লাখ। বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তার শতকরা ৩১ শতাংশ হৃদরোগের কারণে।



আমাদের দেশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ১৭ ভাগই হৃদরোগের কারণে। হৃদরোগে প্রতিবছর দুই লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যান, যার ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট(ফ্রাইড ফুড এবং বেকড ফুড যেগুলোকে আমরা ফাস্টফুড)। যেসব কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে তার মধ্যে ট্রান্সফ্যাট অন্যতম। ট্রান্সফ্যাটজনিত হৃদরোগে মৃত্যু সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বে ট্রান্সফ্যাটের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।


হৃদরোগের কারণ:


পারিবারিক হৃদরোগ ইতিহাস, ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ, অতিরিক্ত ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা এবং অলস জীবনযাত্রা, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা, অতিরিক্ত মদ্যপান।


হার্ট সুস্থ রাখার উপায়:


১. বেশি করে আঁশযুক্ত খাবার খান: যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে সেসব খাবার খাবেন। এসব খাবারের কারণে শরীরে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়। কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সাহায্য করে এই ব্যাকটেরিয়া। বেশি আঁশ আছে এরকম সবজির মধ্যে রয়েছে শিম ও মটরশুঁটি জাতীয় সবজি, কলাই ও ডাল জাতীয় শস্য , ফলমূল, আলু এবং শেকড় জাতীয় সবজি খোসাসহ রান্না করলে সেগুলো থেকেও প্রচুর আঁশ পাওয়া যায়।


আরও পড়ুন: এ সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে করণীয়


২.ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি জাতীয় খাবার কমিয়ে ফেলুন:যেসব খাবারে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা জমাট-বাঁধা চর্বি থাকে সেসব খাবার খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও।চিজ, দই, লাল মাংস, মাখন, কেক, বিস্কিট ও নারকেল তেলে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।


৩. লবণকে বিদায় জানান:লবণ বেশি খেলে শরীরে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর ফলে বৃদ্ধি পায় হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও। ব্রিটেনে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয় যে এনএইচএস থেকে তাদের পরামর্শ হলো দিনে সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম (এক চা চামচের পরিমাণ) লবণ খাওয়া যেতে পারে।


৪. নিয়মিত ব্যায়াম: হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়ামের মতো কার্যকর অন্য কোনো পথ নেই। সকাল-সন্ধ্যা হাঁটা চলা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি। জিমে যেতে হবে এমন নয়। ঘরেই ব্যয়াম করা যায়। তাও না করতে পারলে প্রতিদিন অবশ্যই হাঁটতে হবে।


৫. মদ্যপান পরিহার : অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করতে হবে। বেশি এ্যালকোহল গ্রহণ মানে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়া। এতে হৃদস্পন্দনেও প্রভাব পড়ে। সুস্বাস্থ্য ও সবল হৃদযন্ত্রের জন্য ধূমপানের মতো মদ্যপানও ছাড়তে হবে।


৬. এড়িয়ে চলুন দূষিত বায়ু : সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বে দূষিত বায়ুর পরিমাণ বেড়েছে। আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য মতে, শীতকালে সকালের দিকে বাতাসে দূষিত পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। সাধারণত বাতাসে থাকা অতিরিক্ত ধাতব পদার্থ নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে স্কন্ধদেশের ধমনিপ্রাচীরকে আরো পুরু করে তোলে, যে কারণে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়।


৭. ধূমপান বর্জন: হৃদযন্ত্রের অন্যতম প্রধান শত্রু ধূমপান। ধুমপায়ীদের শরীরে তামাকের নানা রকম বিষাক্ত পদার্থের প্রতিক্রিয়ায় উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয়। ধূমপায়ীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। তামাক পাতা, জর্র্দা, গুল লাগানো ইত্যাদিও পরিহার করতে হবে।


৮. ত্বকে দিন সূর্যের আলো : প্রতিদিন ২০ মিনিট করে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে, যা রক্তচাপকে কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।


৯. সবার সঙ্গে অংশ নিন সকালের নাশতায় : হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, যারা সকালের পারিবারিক নাশতার টেবিল মিস করে তাদের হৃদযন্ত্রকালীন সংকটের পরিমাণ অন্যদের থেকে ২৭ শতাংশ বেশি থাকে।


১০. থাকুন হাসিখুশি : হাসিখুশি আর প্রাণবন্ত মুখাবয়ব শুধু স্টাইল বা ফ্যাশন আইকনই আপনাকে করে তুলবে না, বাড়িয়ে দেবে আপনার নীরোগ থাকার প্রবণতাও। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রাণবন্ত উপস্থিতি আপনার অবসাদ ও অভ্যন্তরীণ প্রদাহকে ছুটি দিয়ে দেবে এবং অলিন্দ ও নিলয়ের প্রকোষ্ঠকে সুঠাম রাখবে।


১১. অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হ্রাস: যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এতে হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, ফলে অধিক ওজন সম্পন্ন লোকদের উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।


১২. মসলা হলে দারুচিনি : খাদ্য তালিকায় মসলা ব্যবহারে আপত্তি থাকলেও দারুচিনির ব্যবহার হৃৎপিণ্ডকে সতেজ করে তুলতে অনন্য ভূমিকা রাখে। প্রতিবেলা খাবারে দুই চা চামচ দারুচিনি রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে আনে, এমনকি মাংস খাবার পরের মুহূর্তেও।


সুন্দর জীবনের জন্য সুস্থতা প্রয়োজন।প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে,সপ্তাহে অন্তত আড়াই ঘণ্টা ব্যায়াম করুন। সুস্থতার জন্য সুস্থ হার্টের বিকল্প নেই। আমরা যদি কিছু নিয়ম মেনে চলি তাহলে কঠিন অসুখ হৃদরোগ থেকে অনেকাংশে মুক্তি পেতে পারি।


এন এইচ, ২৯ সেপ্টেম্বর





মূল সংবাদটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন