ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি – এক কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে আঞ্জু কাপুর (৫৭) নামে এক ভারতীয় নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদিন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আঞ্জু কাপুর গুলশান-২-এর ৯৫ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর বাড়িতে বিমান বাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের দেখাশোনা করতেন। আঞ্জুর দাবি, জগলুল ওয়াহিদ তাকে বিয়েও করেছিলেন।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আঞ্জু কাপুরকে গ্রেফতারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার খালিদুল হক হাওলাদার।

তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া ওই নারী একজন ভারতীয় নাগরিক। তার বাড়ি ভারতের ব্যাংগালুরুতে। তার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, প্রায় ছয় বছর আগে জগলুল ওয়াহিদকে দেখাশোনার জন্য আঞ্জু কাপুর ঢাকায় আসেন এবং ওই বাসায় থাকতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে জগলুল ওয়াহিদ তাকে বিয়ে করেন বলে দাবি করেন আঞ্জু। গত বছরের ১০ অক্টোবর জগলুল ওয়াহিদ মারা গেলে জগলুলের আত্মীয়-স্বজনকে না জানিয়েই তার মরদেহ দাফন করা হয়। কাউকে না জানিয়ে বাড়িসহ ব্যাংকে জমা থাকা টাকাও তুলে নেন আঞ্জু। এ ঘটনায় জগলুলের মেয়ে বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করলে আঞ্জু কাপুর আত্মগোপন করেন। এরপর তাকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

আরও পড়ুন : সময় হলেই বিএনপি টিকা নেবে : নজরুল

জানা যায়, গত অক্টোবরে বাবার খোঁজ না পেয়ে ওয়াহিদের দুই মেয়ে মোবাশশারা ও মুশফিকা গুলশানের ওই বাসায় আসেন। কিন্তু ভেতর থেকে তাদের কাউকে প্রবেশ করতে দেননি। ১০ কাঠা বাড়ির ওপর নির্মিত তিন তলা বাড়িটিও দখলে ছিল আঞ্জুর। দুই মেয়ে ওই সময় দাবি করেন, ওয়াহিদের জীবদ্দশায় আঞ্জু নিজেকে ওয়াহিদের স্ত্রী দাবি না করলেও এখন বলছেন, ওয়াহিদ তার স্বামী ছিলেন। তার স্বামী তাকে বাড়িটি লিখে দিয়ে গেছেন। যদিও তার বক্তব্যের সমর্থনে কাগজপত্র দেখাতে পারেননি অঞ্জু। বিষয়টি নিয়ে গুলশান থানা পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেন মোবাশশারা-মুশফিকা।

ওই সময় মোবাশশারা গণমাধ্যমকে বলেন, ২০০৪ সালে বাড়িটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ২০০৫ সালে মায়ের সঙ্গে আমার বাবার বিচ্ছেদ ঘটে। ২০১৪ সালে আমরা দুই বোন দেশের বাইরে ছিলাম। এ সময় আমার বাবা টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। তখন তাকে দেখাশোনার জন্য আঞ্জু কাপুর এ বাড়িতে আসেন। এরপর থেকে তিনি বাবাকে দেখাশোনার জন্য বাবার সঙ্গে এই বাড়িতেই থাকছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি পুরো বাড়িটিতে একাই থাকছেন।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর থেকে আমি আমেরিকায় স্বামী ইভগেনী রহমানের বাড়িতে থাকি। দেশে এলে এ বাড়িতেই উঠতাম। আমার বোন মুশফিকা গুলশানে মায়ের সঙ্গে থাকেন। তবে মাঝে মধ্যে এ বাড়িতে আসতেন। কিন্তু এখন বাবার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির ভেতরে প্রবেশের অধিকারও হারিয়ে ফেলেছি।

জগলুলের আরেক মেয়ে মুশফিকা বলেন, আঞ্জু কাপুরের দাবি অনুযায়ী, আমার বাবা তাকে বিয়ে করেছেন। প্রকৃত অর্থে আঞ্জু কাপুরের সঙ্গে আমার বাবার বিয়ে হয়নি। কারণ এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি।

ওই সময় উভয় পক্ষই গুলশান থানায় দু’টি জিডি করেন। পরে গত ২ নভেম্বর গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতপ্রণোদিত হয়ে ২৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় এক আদেশ দেন। আদেশে মোস্তফা জগলুল ওয়াহিদের গুলশান-২-এর ৯৫ নম্বর সড়কের বাসায় তার দুই মেয়ের প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে রাতেই ওই বাড়িতে তাদের প্রবেশ ও অবস্থান নিশ্চিত করার পর রাতেই গুলশান থানার ওসিকে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসারকে টেলিফোনে অগ্রগতি জানাতে বলা হয়।

পরে গুলশান থানায় ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে মামলা করেন জগলুল ওয়াহিদের দুই মেয়ে। সেই মামলার তদন্তের পর সত্যতা মেলায় আঞ্জু কাপুরকে গ্রেফতার করল সিআইডি।

সূত্র : সারাবাংলা
এন এইচ, ১০ ফেব্রুয়ারি

সম্পুর্ন খবরটি পড়ার জন্য এই লিঙ্কে ক্লিক করুন ::প্রতারণা মামলায় ভারতীয় নাগরিক আঞ্জু কাপুর গ্রেফতার first appeared on DesheBideshe.

from DesheBideshe https://ift.tt/3jzY5AA